৪৬তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রস্তুতিতে করণীয় কি


- আপডেট সময় : ০৫:০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪ ১৯২ বার পড়া হয়েছে
৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ও ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী শানিরুল ইসলাম শাওন। আজ দ্বিতীয় পর্বে সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হলো।
৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির ধারাবাহিক আলোচনায় আজ আমরা সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করব। লিখিত পরীক্ষার এ অংশে ভালো প্রস্তুতি নিলে আপনি ৭৫ নম্বর পর্যন্ত পেতে পারেন। এমনকি যাঁরা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন না, তাঁরাও ভয় না পেয়ে প্রস্তুতি নিলে ৫৫-৬০ নম্বর পেতে পারেন।
লিখিত পরীক্ষার এই বিষয়ে ১০০ নম্বর বরাদ্দ। ১০০ নম্বরকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে: সাধারণ বিজ্ঞানে ৬০ নম্বর, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ২৫ নম্বর, এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিতে ১৫ নম্বর।
সাধারণ বিজ্ঞান
অধ্যায়ভিত্তিক ৩৫-৪৫তম বিসিএসে আসা ছোট-বড় প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো:
- আলো: ২৪টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ৯.৪৪%
- শব্দ: ১৫টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ৫.৯১%
- চুম্বকত্ব: ১১টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ৪.৩৩%
- অম্ল, ক্ষারক ও লবণ: ১১টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ১২.৬%
- পানি: ২২টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ৮.৬৬%
- আমাদের সম্পদ: ৩০টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ১১.৮১%
- পলিমার: ৯টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ৩.৫৫%
- বায়ুমণ্ডল: ১৫টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ৫.৯১%
- খাদ্য ও পুষ্টি: ৩৮টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ১৪.৯৬%
- জৈব প্রযুক্তি: ২৮টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ১১.০২%
- রোগ ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা: ৩০টি প্রশ্ন, প্রশ্ন আসার হার ১১.৮১%


সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ভালো প্রস্তুতি নিতে হলে এসব অধ্যায়ভিত্তিক বিষয়গুলো ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে। প্রশ্নগুলোর আসার হার দেখে বোঝা যায় কোন অধ্যায় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, তাই সেসব অধ্যায়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
পরিসংখ্যানটি পরীক্ষার্থীর পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খেয়াল করুন, অধ্যায়ভিত্তিক গুরুত্ব ওঠানামা করছে। তাই আপনার পরিকল্পনায় থাকতে পারে—প্রথমেই বিজ্ঞান অংশের আগের প্রশ্ন (অন্তত ৩৫-৪৫তম বিসিএস) পড়ে ফেলা। এসব প্রশ্ন থেকে ৭০ শতাংশের বেশি কমন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। উত্তর পড়ার সময় খাতায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ছোট করে নোট করে রাখতে পারেন; যেমন আলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন বর্ণের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য, বিভিন্ন পলিমারের মনোমার ইত্যাদি।
বিজ্ঞানে কনসেপ্ট পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি। বুঝে পড়ার বিষয়গুলো না বুঝে মুখস্থ করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব নয়। তাই কনসেপ্ট পরিষ্কার করার জন্য প্রথমে নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই পড়া উচিত। অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বইও সহায়ক হতে পারে। বইয়ের সরল ভাষা ও ব্যবহৃত চিত্র আপনার কাছে বিষয়গুলো স্পষ্ট করবে।
বিজ্ঞানে সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যগত বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রশ্ন আসে; যেমন, ৪০তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময় দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল বলে তখন পরীক্ষায় ডেঙ্গু বিষয়ে প্রশ্ন এসেছিল। তাই সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য বিষয় সম্পর্কে আপডেট থাকতে পত্রিকা পড়া জরুরি। বিজ্ঞান বইয়ের চিত্রগুলো ভালোভাবে দেখে পড়বেন। চিত্রগুলো কনসেপ্ট পরিষ্কার করে এবং পরীক্ষার খাতা সুন্দর করে সাজাতেও সাহায্য করে। বিজ্ঞানে প্রশ্ন আসে অনেক বেশি। ৭.৫ নম্বরের প্রতি সেট প্রশ্ন উত্তর করার জন্য সময় পাবেন ১৩-১৩.৫ মিনিট। প্রতি সেটে ২-৫টি প্রশ্ন থাকতে পারে। তাই বিজ্ঞানে সরাসরি উত্তর লিখবেন, কোনো ভূমিকা না লিখে। সংজ্ঞা দেবেন এবং নিচে উদাহরণ দেবেন। নম্বর বুঝে চিত্র বা ডায়াগ্রাম যোগ করতে পারেন।
বেশি লেখার চেয়ে উত্তরে চিত্র, ডায়াগ্রাম, টেবিল, ফ্লো-চার্ট, বা ইনফোগ্রাফ প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন। এগুলো খাতার একঘেয়েমি দূর করে ভালো নম্বর পেতে সহায়ক হবে। চিত্র সব সময় পেনসিলে আঁকবেন এবং নিচে ক্যাপশন দেবেন, যা পেনসিল বা নীল কালিতে হতে হবে। চিত্র এঁকে উপযুক্তভাবে লেবেলিং করবেন। লেবেলিং সব সময় ডান পাশে হয় এবং এক সমান্তরালে লেবেলিং করলে খাতার সৌন্দর্য বাড়ে। সব হেডলাইন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা সমাপ্তিসূচক চিহ্নের ক্ষেত্রে নীল কালি ব্যবহার করলে ভালো হবে। তুলনামূলক সহজ অধ্যায় যেমন আলো, শব্দ, পানি, চুম্বকত্ব, আমাদের সম্পদ, অম্ল, ক্ষারক ও লবণ দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন।


কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
এই অংশে ২৫ নম্বর থাকে। সাধারণত ২.৫ নম্বর করে একক প্রশ্ন থাকে। আগে ১২ বা ১৩টি প্রশ্ন থেকে ১০টির উত্তর করতে হতো। কিন্তু সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএসে কোনো বিকল্প ছিল না, অর্থাৎ ১০টির মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর করতে হয়েছিল। এ অংশের অধ্যায়গুলো হলো:
- কম্পিউটার প্রযুক্তির ইতিহাস ও প্রজন্ম
- পার্সোনাল কম্পিউটারের কার্যাবলি
- সিপিইউ ও মাইক্রোপ্রসেসর
- বাস আর্কিটেকচার
- মাদারবোর্ড
- সফটওয়্যার
- ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস
- অনুবাদক
- সফটওয়্যার উন্নয়ন
- বায়োস
- অফিস অটোমেশন
তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়গুলো হলো:
- ডেটাবেজ সফটওয়্যার
- তথ্য, উপাত্ত ও প্রসেসিং
- সিস্টেম বিশ্লেষণ
- মাল্টিমিডিয়া
- টপোলজি
- নেটওয়ার্কিং ডিভাইস
- ইন্টারনেট প্রটোকল
- স্যাটেলাইট
- ট্রান্সমিশন সিস্টেম
- টেলিকমিউনিকেশন
- স্মার্টফোন
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
- জনপ্রিয় ওয়েবসাইট
- টেক জায়ান্ট ও বিবিধ
এই বিষয়গুলোতে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল আশা করা যায়।
প্রস্তুতির জন্য প্রথমে এ অংশের আগের বিসিএসের প্রশ্ন পড়ে নিন। ৮০ শতাংশের বেশি প্রশ্ন কমন পেতে পারেন। এ অংশের প্রায় সব সিলেবাসই প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতো। আগের প্রশ্ন দেখে যেসব আলোচ্যসূচি থেকে প্রশ্ন আসে না, যেমন কম্পিউটারের ইতিহাস ও বিবর্তন, সেগুলো বাদ দিতে পারেন। প্রশ্নে যা চেয়েছে, তা–ই দেবেন। অতিরিক্ত লেখার সময় পাবেন না। উত্তরে ফ্লো-চার্ট বা ডায়াগ্রাম আঁকার চেষ্টা করবেন পেনসিল দিয়ে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের বই পড়ে প্রথমে কনসেপ্ট পরিষ্কার করবেন। এরপর সহায়ক বই পড়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং চর্চা করবেন। না বুঝে মুখস্থ করবেন না। পত্রিকার প্রযুক্তি পাতা নিয়মিত পড়বেন, কারণ সমসাময়িক বিশ্বের প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ডায়াগ্রাম বা ফ্লো-চার্ট ছোট করে নোট করে নেবেন, যাতে সহজে রিভিশন দিতে পারেন।
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি
এখানে ১৫ নম্বর বরাদ্দ। এ অংশে ২.৫ নম্বর করে ৬টি অথবা ৫ নম্বর করে ৩টি প্রশ্ন থাকবে। কোনো বিকল্প প্রশ্ন থাকবে না। উত্তর করার জন্য সময় পাবেন ২৭ মিনিট। এ অংশের দুটি প্রধান অধ্যায়:
ইলেকট্রিক্যাল প্রযুক্তি
- বৈদ্যুতিক বিভব
- বর্তনী ও এর উপাদান
- কার্শফের সূত্র
- অহমের সূত্র
- বৈদ্যুতিক ক্ষমতা ও শক্তি
- তড়িৎ চুম্বক ও চৌম্বক ক্ষেত্র
- শ্রেণি ও সমান্তরাল সংযোগ
- ট্রান্সফরমার
- মোটর
- বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম
ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি
- ওয়েভফর্ম
- রোধক ও প্রকারভেদ
- ইলেকট্রনিকস উপাদান
- এমপ্লিফায়ার ও অসিলেটর
- জটিল সংখ্যা (বাদ দিতে পারেন)
- আরএলসি সার্কিট
- বিদ্যুৎ জেনারেশন ও ট্রান্সমিশন
- অ্যানালগ ও ডিজিটাল সংকেত
- ডিজিটাল ডিভাইস ও বর্তনী
- বিবিধ


এই বিষয়গুলোতে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
সত্যি কথা হলো, কোনো বোর্ড বই থেকে এ অংশের জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি আপনি নিতে পারবেন না। তাই প্রথমে ভালোভাবে দেখে একটি সহায়ক বই সংগ্রহ করুন, যা সহজ ভাষায় লেখা। কঠিন ভাষায় লেখা বই পরিহার করা আবশ্যক। অবশ্যই বুঝে বুঝে পড়বেন, কারণ এ অংশ মুখস্থ করে উত্তর করা সম্ভব নয়। পড়ার পর বারবার লিখে চর্চা করবেন। প্রয়োজনে কাগজে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সংক্ষেপে লিখে বা চিত্র এঁকে দেয়ালে টানিয়ে রাখতে পারেন বারবার চোখ বুলানোর জন্য।
প্রশ্নে যা চাইবে, যতটুকু চাইবে, ঠিক ততটুকুই উত্তর করবেন। উত্তরে চিত্র ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। ইউটিউব বা গুগলে সার্চ করে শিক্ষামূলক অনেক ভিডিও এবং আর্টিকেল পাবেন। যাঁরা বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের ছিলেন না, তাঁরা কঠিন মনে করলে এ অংশের শুধু আগের বিসিএসের প্রশ্নগুলো চর্চা করবেন। নতুন কিছু পড়ার দরকার নেই।












