গোল্ড মার্কেট আপডেট
সোনার দাম ভরিতে ২,১৯২ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ রেকর্ডে—কেন এই দাম


- আপডেট সময় : ০৫:২৪:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫ ১১১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের সোনার বাজার আবারও আলোচনায়। ১৪ জুন ২০২৫ তারিখে হঠাৎ করেই সোনার দাম ভরিতে ২,১৯২ টাকা বেড়েছে। এখন ২২ ক্যারেট সোনার দাম ১,১৭,২৯২ টাকা, যা ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ। এই বাড়তি দাম শুধু স্বর্ণালংকারপ্রেমীদের নয়, সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের জন্যও হয়ে উঠেছে বড় মাথাব্যথার কারণ।
🔷 বাংলাদেশে বর্তমান সোনার বাজারের চিত্র
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) নতুন এই মূল্য ঘোষণা করার পর দেশের সোনার বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সোনার বিক্রি কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন দোকান মালিক।
| ক্যারেট | বর্তমান দাম (ভরি প্রতি) | পূর্বের দাম | পার্থক্য |
|---|---|---|---|
| ২২ ক্যারেট | ১,১৭,২৯২ টাকা | ১,১৫,১০০ টাকা | +২,১৯২ টাকা |
| ২১ ক্যারেট | ১,১১,৯০৮ টাকা | ১,০৯,৮০০ টাকা | +২,১০৮ টাকা |
| ১৮ ক্যারেট | ৯৫,৭২৮ টাকা | ৯৩,৫০০ টাকা | +২,২২৮ টাকা |
🔷 সোনার দাম বাড়ার কারণসমূহ (Reasons Behind the Price Hike)
১. আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার মূল্যবৃদ্ধি
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বর্তমানে প্রতি আউন্সে ২,৪৫০ মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে। এই দর গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর সোনার বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে।


২. ডলার সংকট ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সাশ্রয়ে আমদানি সীমিত করছে, ফলে সোনার সরবরাহ কমেছে। এই সীমাবদ্ধতা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
৩. স্থানীয় চাহিদা বৃদ্ধি
বিয়ের মৌসুম ও উৎসব ঘিরে সোনার চাহিদা বাড়ে। এই সময় বিক্রেতারা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ান।
৪. মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিয়োগের ঝোঁক
লোকজন টাকা ধরে না রেখে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছে। বিশেষ করে দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা ও ব্যাংকিং খাতে অনাস্থা বিনিয়োগকারীদের সোনায় আকৃষ্ট করেছে।
🔷 বাজার বিশ্লেষণ: কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন?
🔸 সাধারণ ক্রেতা
স্বর্ণালংকার কেনার জন্য যারা সঞ্চয় করছিলেন, তাদের জন্য এখন কেনা কঠিন হয়ে গেছে। অনেকেই এখন বিকল্প ধাতুর প্রতি ঝুঁকছেন।
🔸 স্বর্ণ ব্যবসায়ী
দামের ওঠানামার কারণে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। বেশি দামে সোনা কিনে পরে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে অনেক সময়।
🔸 আমদানিকারক ও পাইকার
ডলার সংকট ও শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আমদানিতে খরচ বেড়েছে, ফলে লাভের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
🔷 সোনা বিনিয়োগ: সঠিক সময় কি এখন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার দাম এখনো বাড়ার সম্ভাবনা আছে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য এটি ভালো সময় হতে পারে। তবে ক্ষণস্থায়ী মুনাফার আশা করলে এটি ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে।
“সোনা সবসময়ই এক ধরনের ‘হেজিং ইনভেস্টমেন্ট’। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় এটি নিরাপদ।”
ড. আসিফ রহমান, অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
🔷 সরকার ও বাজুসের ভূমিকা
বাজুস জানিয়েছে, দাম বাড়ার বিষয়ে তারা নিয়মিত আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করে থাকে এবং দেশে মজুদ পরিস্থিতি বুঝে দাম নির্ধারণ করে। তবে অভিযোগ আছে, কিছু সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও সোনার আমদানি প্রক্রিয়ায় কিছু নিয়ম শিথিল করতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে, যাতে দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।
🔷 ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস: আরও বাড়বে?
বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা (যেমন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট), ডলারের দরপতন, এবং মার্কিন সুদের হার কমার সম্ভাবনা ইঙ্গিত দেয়—সোনার দাম আরও বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে যদি ডলার সংকট না কমে, তাহলে স্বর্ণের আমদানিতে ঘাটতি আরও বাড়বে এবং তার সরাসরি প্রভাব পড়বে দাম বৃদ্ধিতে।
🔷 বিকল্প কী?
💠 কৃত্রিম গহনা:
কোনো কোনো শ্রেণির মানুষ এখন জারকন বা মেটাল গহনার দিকে ঝুঁকছেন, কারণ তা দেখতে সোনার মতো হলেও দাম অনেক কম।
💠 ডিজিটাল গোল্ড ইনভেস্টমেন্ট:
নতুন প্রজন্ম এখন ডিজিটাল গ্যাজেটে সোনা কিনছেন (যেমন: গুগল পে, পেটিএম ইত্যাদির মাধ্যমে)। তবে বাংলাদেশে এখনো এ সুযোগ সীমিত।
🔷 ক্রেতাদের জন্য পরামর্শ
- প্রয়োজন না থাকলে এখনই সোনা কেনা থেকে বিরত থাকুন
- স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি অনলাইনে দাম যাচাই করুন
- অপ্রয়োজনীয় গহনা বিক্রি করে লাভ করা যেতে পারে
- প্রয়োজনে ছোট ও হালকা ডিজাইনের গহনা কিনুন












