মার্ক জাকারবার্গ খুঁজছেন বিশ্বের সেরা AI গবেষক!
সেরা এআই কর্মীর খোঁজে আমেরিকা জাকারবার্গ | মেটা সুপার ইন্টেলিজেন্স ২০২৫


- আপডেট সময় : ০১:২৩:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫ ৮৮ বার পড়া হয়েছে
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) খাতে যে প্রতিযোগিতা চলছে, তার অন্যতম কেন্দ্রে রয়েছেন Facebook ও Instagram-এর মূল কোম্পানি Meta-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ। ২০২৫ সালে এসে এই প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়েছে, আর সেই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো “মানবসম্পদ” বা AI ট্যালেন্ট সংগ্রহ। এ কারণেই এখন জাকারবার্গের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য — বিশ্বের সেরা AI গবেষকদের Meta-তে নিয়ে আসা।
AI এখন শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, এটি ভবিষ্যতের অর্থনীতি, সামরিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কাঠামোর চেহারা বদলে দিচ্ছে। ChatGPT, Claude, Gemini, Mistral, Meta’s Llama — এদের মধ্যে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু সফটওয়্যার নয়, দরকার বুদ্ধিদীপ্ত এবং অভিজ্ঞ AI গবেষক ও ইঞ্জিনিয়ার।
“Superintelligence” টিম: Meta–র নতুন মিশন
Meta সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে একটি নতুন AI গবেষণাল্যাব তৈরির পরিকল্পনা, যার নাম “Superintelligence”। এই গবেষণা ইউনিটটির লক্ষ্য হবে এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা, যা মানুষের চেয়েও বেশি জ্ঞানসম্পন্ন, দক্ষ এবং বুদ্ধিমান হতে পারে।
এই উদ্দেশ্যে মার্ক জাকারবার্গ এখন নিজে থেকেই বিশ্বের শীর্ষ AI গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন — হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল, এমনকি ব্যক্তিগতভাবে দেখা করছেন। তিনি প্রস্তাব দিচ্ছেন কোটি কোটি ডলারের সাইনিং বোনাস, এবং Meta-তে গবেষণা করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা।
“Zuck Bucks”: AI–এর ট্যালেন্ট কেনার দৌড়
বিশ্বজুড়ে AI গবেষকদের Meta আকৃষ্ট করার জন্য যে আর্থিক অফার দেওয়া হচ্ছে, সেটিকে প্রযুক্তি দুনিয়ায় বলা হচ্ছে “Zuck Bucks”। জানা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সাইনিং বোনাস দেওয়া হয়েছে বা অফার করা হয়েছে। এই ধরনের অফার শুধু AI ইঞ্জিনিয়ার নয়, প্রতিষ্ঠিত গবেষক, স্টার্টআপ ফাউন্ডার, এমনকি OpenAI-এর মতো প্রতিষ্ঠানের সদস্যদেরও লক্ষ্য করছে।
যাদের দিকে নজর
Meta ইতোমধ্যেই OpenAI থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষককে নিজের দলে নিয়ে এসেছে। যেমন:
- লুকাস বেয়ার (Lucas Beyer)
- আলেকজান্ডার কোলেসনিকভ (Alexander Kolesnikov)
- জিয়াওহুয়া ঝাই (Xiaohua Zhai)
এছাড়াও, Meta-এর লক্ষ্য Anthropic, Google DeepMind, এবং অন্যান্য উদীয়মান AI কোম্পানি থেকে গবেষক টেনে আনা।
Scale AI–তে বিনিয়োগ
Meta AI ডেটা লেবেলিং কোম্পানি Scale AI-তে প্রায় ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই বিনিয়োগ শুধু আর্থিক নয়, বরং কৌশলগত। Scale AI–এর প্রধান নির্বাহী Alexandr Wang-কে Meta-র Superintelligence টিমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। এটি Meta-এর লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে, বিশেষ করে ডেটা প্রশিক্ষণে।
অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য: Yann LeCun বনাম জাকারবার্গ
Meta–র প্রধান AI বিজ্ঞানী Yann LeCun নিজে “Superintelligence” ধারণাকে সমর্থন করেন না। তিনি বিশ্বাস করেন, বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল বা LLM-এর মাধ্যমে প্রকৃত AGI বা ASI অর্জন সম্ভব নয়। তবে জাকারবার্গের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তিনি মনে করেন, যদি প্রযুক্তির দৌড়ে শীর্ষে থাকতে হয়, তাহলে Superintelligence গড়ে তুলতেই হবে।
প্রতিযোগিতার পরিবেশ
Meta এখন এক তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে আছে:
- OpenAI: Sam Altman এর নেতৃত্বে ChatGPT নিয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
- Anthropic: Claude AI দিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে।
- Google DeepMind: Gemini-এর মাধ্যমে নতুন উচ্চতায় যেতে চাচ্ছে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে Meta-কে শুধু টেকনোলজি নয়, দক্ষ টিম গঠনেও অগ্রগামী হতে হবে।
AI গবেষণায় সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা
AI গবেষকরা শুধু টাকার জন্য কাজ করেন না। তারা গবেষণার স্বাধীনতা, এক্সপেরিমেন্টের সুযোগ এবং একটি উদ্দীপনামূলক সংস্কৃতি চান। জাকারবার্গ এই বিষয়গুলো বুঝতে পেরে Meta-র পরিবেশকে আরও গবেষক-বান্ধব করে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে চান, যেখানে সেরা AI মেধাবীরা আনন্দের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন।
কৌশলগত পরিকল্পনা: IPO থেকে গবেষণা ল্যাব
Meta শুধু LLM তৈরি করেই থেমে থাকতে চায় না। তারা ভবিষ্যতে:
- AI–ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা
- এডুকেশন টুলস
- ব্যক্তিগত সহকারী
- কোডিং সহকারী
- ট্রান্সলেশন ও ভাষা প্রযুক্তি
এরকম বহু ক্ষেত্রে Superintelligence ব্যবহার করতে চায়। এছাড়া গবেষণার ফলাফলগুলো ওপেন সোর্স না রেখে Meta-র প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভলি ব্যবহার করা হতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
যদিও Meta AI রিসার্চে বড় বিনিয়োগ করছে, তবে কিছু সমালোচক বলছেন, কেবলমাত্র টাকায় প্রতিভা ধরা যায় না। অনেক গবেষক Meta–র কর্পোরেট কাঠামো, সিদ্ধান্ত নেবার ধরণ এবং ডেটা গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অন্যদিকে, প্রতিযোগীরা বলছে—Meta এখনো মূল গবেষণার দিক থেকে পিছিয়ে।
মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বে Meta এখন শুধু একটি সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি নয়, বরং ভবিষ্যতের AI যুদ্ধে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। AI-কে ঘিরে এই প্রতিযোগিতা কেবল প্রযুক্তির নয়, বরং মননশীলতা, উদ্ভাবন এবং নেতৃত্বেরও। সেরা AI–কর্মীদের দলে আনতে জাকারবার্গ যে বিশাল প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তা আগামী দিনের প্রযুক্তি বিশ্বে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
Meta কি শেষ পর্যন্ত AI প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে পারবে? নাকি এই যুদ্ধ অন্য কেউ জিতে নেবে? সেটি নির্ধারণ করবে সময়, প্রতিভা এবং কৌশল।












