যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পেট্রোডলার চুক্তি নবায়ন করছে না সৌদি আরব কি হবে এখন


- আপডেট সময় : ০৯:০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪ ২০০ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ দশকের পেট্রোডলার চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে সৌদি আরব। সম্প্রতি এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে, কিন্তু সৌদি সরকার আর এই চুক্তি নবায়নে আগ্রহী নয়। এর ফলে ভূরাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৯৭৪ সালের ৮ জুন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে পেট্রোডলার চুক্তি সই হয়েছিল, যা ৯ জুন শেষ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব এই চুক্তি নবায়ন করতে আগ্রহী নয়। নাসডাক ডটকমের খবর অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ডিডলারাইজেশন প্রক্রিয়া যেভাবে গতি পেয়েছে, এই চুক্তির নবায়ন না হওয়া তা আরও বাড়িয়ে দেবে। যেমন এই চুক্তির ফলে বিশ্ববাণিজ্যে মার্কিন ডলারের ব্যবহার বেড়েছিল।
‘পেট্রোডলার’ শব্দটি শুনে মনে হতে পারে এটি কোনো মুদ্রা। প্রকৃতপক্ষে, পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত মার্কিন ডলারকেই পেট্রোডলার বলা হয়। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সোনা আদান–প্রদানের নীতি বাতিল করার পর পেট্রোডলার চালু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৭০-এর দশক ছিল বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতির উত্তাল সময়। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা ধাক্কা খায়। ডলারের বিনিময় হার হঠাৎ কমতে শুরু করে এবং যুক্তরাষ্ট্রে পেট্রোলিয়ামের সংকটও তৈরি হয়েছিল।
১৯৭৩ সালে মিসর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ইয়োম-কিপ্পুর যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানির বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে পশ্চিম এশিয়ার তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো, যা তাদের খনিজ তেলের ভান্ডারে আরও চাপ সৃষ্টি করে।
এই সংকট মোকাবিলায় সৌদি আরবের সঙ্গে পেট্রোডলার চুক্তি করেছিল ওয়াশিংটন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছ থেকে তেল কিনবে এবং এর বিনিময়ে সৌদি আরবকে সামরিক সহায়তা দেবে।
এই সামরিক সহায়তার ফলে সৌদি আরব ইসরায়েলের হাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্তি পায়। চুক্তির শর্ত ছিল, সৌদি আরব শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্য যেসব দেশের কাছে তেল বিক্রি করবে, সেগুলোর লেনদেনও মার্কিন ডলারে হবে।
চুক্তিতে আরও বলা হয়েছিল, পেট্রোডলার থেকে যে রাজস্ব আয় হবে, তার একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রকেও দিতে হবে। এর মাধ্যমে সৌদি আরব সামরিক সুরক্ষা পেয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিরাপত্তা।


এখন কী হবে
পেট্রোডলার চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় সৌদি আরব এখন মুক্ত। তারা শুধু ডলারে নয়, অন্যান্য দেশের মুদ্রায়ও তেল বিক্রি করতে পারবে। চীনের ইউয়ান, ইউরোপের ইউরো, রাশিয়ার রুবল, জাপানের ইয়েন—সব মুদ্রায় লেনদেন করতে পারবে দেশটি।
এ ছাড়া, ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্রিপ্টোকরেন্সিতেও লেনদেন হতে পারে। জানা গেছে, সৌদি আরব ক্রিপ্টোকরেন্সিতেও লেনদেন করবে।
সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা ধাক্কা খাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের লেনদেন কমবে।
গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার কিছুটা প্রাধান্য হারিয়েছে। অনেক দেশ বাণিজ্যে ডলারনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসছে বা আসার চেষ্টা করছে। যদিও ডলারের বিকল্প হিসেবে কোনো মুদ্রা এককভাবে উঠে আসেনি, ইউয়ান, রুবল এবং ইয়েনের ব্যবহার বেড়েছে এবং এদের বিনিময় হারও বেড়েছে।
তবে বিশ্ববাণিজ্য এখনো অনেকাংশে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে। এই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার মূল হাতিয়ার হলো ডলার। বেশির ভাগ লেনদেনের ক্ষেত্রেই সারা বিশ্বে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হয়। ডলারের বিনিময় হার বাড়ল না কমল, তার ওপর বিশ্ব অর্থনীতির অনেক কিছু নির্ভর করে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বাড়ালে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যায়, যা বিনিয়োগকারীদের মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের প্রতি আকৃষ্ট করে। ফলে ডলারের চাহিদা ও বিনিময় হার বেড়ে যায়।
পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডলারের হৃত গৌরব ফেরাতে আন্তর্জাতিক নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। চীনের প্রাধান্য খর্ব করতে আরও উদ্যোগী হতে হবে। কারণ, এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে চীন।
সৌদির সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের কতটা ক্ষতি হবে, এখনই তা বলা মুশকিল। তবে ডলারের রাজত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে কি না বা তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কোথায় নমনীয় হতে হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।












