প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রেই বিএনপির পক্ষে কাজ করছে
বিএনপির পক্ষে প্রশাসন নির্বাচন করা সম্ভব হবে:নাহিদ

- আপডেট সময় : ০৪:২৬:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ৭১ বার পড়া হয়েছে
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করে, প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রেই বিএনপির পক্ষে কাজ করছে, এমন প্রশাসনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
আজ বুধবার বিকেলে ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।
বৈঠকটি গুলশানে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে নাহিদ ইসলামের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনে যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছি, তা তুলে ধরেছি। পাশাপাশি আমাদের তিনটি মূল দাবি—সংস্কার, বিচার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের কথাও জানিয়েছি।’
ন্যূনতম নয়, বরং মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—এ কথা জানিয়ে দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গুণগত পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি। শুধু কসমেটিক বা আংশিক পরিবর্তন দিয়ে নির্বাচন এগিয়ে নেওয়া হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আর এমন পরিস্থিতিতে এনসিপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সেটিও ভাবনার বিষয়।”
মাঠ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “বর্তমানে যে মাঠ প্রশাসন রয়েছে, আমাদের কাছে তা নিরপেক্ষ মনে হয়নি। আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর বিভিন্ন স্থানে হামলা হচ্ছে, আর এসব ঘটনায় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে—এ বিষয়গুলো আমরা বৈঠকে তুলে ধরেছি।”
প্রশাসন কাদের পক্ষ নিচ্ছে—এই প্রশ্নে নাহিদ বলেন, “আমরা দেখছি, প্রশাসন আমাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছে। মাঠপর্যায়ে চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডও অব্যাহত রয়েছে, যেখানে প্রশাসন কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হলে নিরপেক্ষ প্রশাসন, আমলাতন্ত্র এবং পুলিশের প্রয়োজন রয়েছে।”

বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “মার্কিন প্রতিনিধিদল মূলত বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সংস্কার উদ্যোগ এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ এবং এনসিপির গঠন ও আদর্শ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ব্যাখ্যা করেছি কেন ও কোন প্রেক্ষাপটে আমাদের রাজনৈতিক দল এগিয়ে যাচ্ছে। সংস্কার কমিশনে যে প্রস্তাবগুলো জমা দিয়েছি, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি। আমাদের তিনটি প্রধান দাবি—বিচার, মৌলিক সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন—এগুলোও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।”
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনকাল নির্ধারণে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময়ের কথা বলেছেন। প্রাথমিকভাবে আমরা এই সময়সীমাকে সমর্থন করছি। তবে এর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে—বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, তার একটি রোডম্যাপ দিতে হবে, এবং সংস্কার, বিশেষ করে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব না হলে কেবল সময় নিয়ে আলোচনা করে কোনো বাস্তব ফল পাওয়া যাবে না।”
আওয়ামী লীগের বিচার ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, “না, এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট আলোচনা হয়নি। তবে আমাদের দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছি—বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক, রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা উচিত নয়।”
বৈঠকে আরও আলোচনা হয় দেশের ব্যবসা পরিবেশ, সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং এনসিপি ক্ষমতায় এলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে—সেসব নিয়েও। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে বলে জানান তিনি।