রাজনীতির নতুন মোড়
বিএনপির নেতৃত্বে নতুন দিগন্ত? দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান


- আপডেট সময় : ০১:০৪:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫ ৮৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের নাম দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত ও বিতর্কিত। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে যান তিনি এবং এরপর থেকে প্রবাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ২০২5 সালের জুলাই মাসে একটি প্রশ্ন নতুন করে ঘুরে ফিরে আসছে—তারেক রহমান দেশে ফিরছেন কবে? বিএনপির নেতৃত্বে নতুন দিগন্ত? দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান
এই প্রশ্ন শুধু বিএনপি সমর্থক নয়, দেশের সাধারণ রাজনৈতিক সচেতন নাগরিকদের মধ্যেও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও দলীয় সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, দেশে ফেরা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা যতই থাকুক না কেন, বিষয়টি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
ফিরে দেখা: বিদেশ গমনের প্রেক্ষাপট
২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় দুর্নীতির অভিযোগে। এরপর দীর্ঘ ১৮ মাস কারাভোগের পর চিকিৎসার জন্য জামিনে মুক্তি পান এবং ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে যান। তখন থেকেই তিনি লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে অবস্থান করছেন। সেখানে বসেই বিএনপির নীতিনির্ধারণী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এতদিন ধরে তার অনুপস্থিতি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে বলে অনেক বিশ্লেষকের মন্তব্য। যদিও ভার্চুয়াল উপস্থাপনায় তিনি দলের দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছেন, তবুও মাঠে সরাসরি উপস্থিতির ঘাটতি রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে।
সাম্প্রতিক গুঞ্জন ও সংবাদ প্রতিবেদন
২০২5 সালের জুন-জুলাই মাসে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ বা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে।
প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন যে, তারা আশা করছেন তারেক রহমান আগস্টের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। তবে তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়নি।
বাংলানিউজ২৪ এবং দেশ রূপান্তর সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের আগেই তার দেশে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে। আবার একটি ইউটিউব ভিত্তিক সংবাদ ভিডিওতে বলা হয়েছে, তারেক রহমান ২৮ জুলাই দেশে ফিরতে পারেন, তবে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত নয়।
এইসব তথ্যসূত্র একটি ব্যাপার নিশ্চিত করে—দলে এবং সমর্থকদের মাঝে তার দেশে ফেরার বিষয়ে ব্যাপক আশাবাদ ও প্রস্তুতি রয়েছে।
কেন এই মুহূর্তে দেশে ফেরার আলোচনা?


তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা এখন আলোচনায় আসার পেছনে রয়েছে কয়েকটি বিশেষ কারণ:
- দলীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা: বিএনপির কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত অনেক জায়গায় সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বলছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরলে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে।
- খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা: খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর এবং তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে পারছেন না। এ অবস্থায় দলের নেতৃত্বের ভার পুরোপুরি তারেক রহমানের কাঁধে চলে এসেছে। দেশে ফিরলে এই নেতৃত্ব আরও সুসংহত হবে।
- নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি: পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বা কোনো সম্ভাব্য আন্দোলনের দিক থেকে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় এটি। দলীয় প্রধান দেশে থাকলে আন্দোলনের কৌশল বাস্তবায়ন সহজ হয়।
- আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিবর্তন: ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু আলোচনায় তারেক রহমানের নাম এসেছে। আন্তর্জাতিক চাপ বা সহানুভূতি যদি বিএনপির দিকে থাকে, তা হলে তার দেশে ফেরা নিরাপদ হতে পারে।
আইনি জটিলতা ও সম্ভাব্য বাধা
তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে রয়েছে একাধিক আইনি বাধা। তিনি ২০০৮ সালের পর থেকে পলাতক হিসেবে বিবেচিত এবং তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলা চলমান রয়েছে।
বিশেষ করে:
- ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা
- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা
এই মামলাগুলোর মধ্যে কিছুতে তার বিরুদ্ধে সাজা হয়েছে, আবার কিছু এখনো বিচারাধীন। দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও বিএনপির দাবি, এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা।
দলীয় প্রস্তুতি ও নেতাকর্মীদের মনোভাব
বিএনপির একাধিক স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা তারেক রহমানকে সশরীরে দেশে ফিরে নেতৃত্ব দিতে দেখতে চান। তাদের মতে, ভার্চুয়াল নেতৃত্বে যেমন কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তেমনি কর্মীদের মনোবলও কমে গেছে।
ঢাকা মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন:
“আমরা মাঠে নামতে প্রস্তুত, শুধু তারেক সাহেবের ফেরা দরকার। উনার উপস্থিতি মানেই আমাদের অনুপ্রেরণা।”
জেলা পর্যায়ের এক নেতা জানান, তারেক রহমান দেশে ফিরলে তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে গণসংবর্ধনার আয়োজন করবেন এবং নেতাকর্মীদের সাথে মিটিংয়ের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, পলাতক ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তারেক রহমান দেশে ফিরলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্যমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেন:
“বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যদি দেশে ফিরতে চান, তা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু তার ফিরে আসা মানেই গ্রেপ্তার এড়ানো যাবে না।”
এই ধরনের বার্তা দিয়ে সরকার স্পষ্ট করেছে, দেশে ফিরলে তাকে আইন অনুযায়ী বিচারপ্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক মাধ্যমের আলোড়ন
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন শুরু হয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব ও টুইটারে ‘তারেক আসছে’ হ্যাশট্যাগে হাজারো পোস্ট হচ্ছে। বিএনপি সমর্থকরা যেমন একে ‘নতুন আশার সূচনা’ হিসেবে দেখছেন, তেমনি বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, তিনি দেশে ফিরবেন কি না, নাকি এটি একটি কৌশল মাত্র।
বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট হওয়া ভিডিওগুলোর মধ্যে কয়েকটি লাখ লাখ দর্শক পেয়েছে। এমনকি কিছু চ্যানেল তার আগমনের তারিখ জানিয়ে কাউন্টডাউন শুরু করেছে, যদিও তার কোনো প্রামাণ্য ভিত্তি নেই।
ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে প্রভাব
তারেক রহমান দেশে ফিরলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
- বিএনপির অভ্যন্তরীণ ঐক্য বৃদ্ধি পাবে।
- আন্দোলন ও গণসংযোগে গতি আসবে।
- সরকারের ওপর চাপ বাড়বে।
- আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকরা নতুন করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর দেবে।
তবে এ-ও সত্য, তারেক রহমান দেশে ফিরে যদি কারাগারে যেতে বাধ্য হন, তাহলে বিএনপির মধ্যে আবারো হতাশার ঢেউ বয়ে যেতে পারে।
শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন থেকে যায়: তারেক রহমান দেশে ফিরছেন কবে?
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ২০২৫ সালের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ বা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত নয়। বিএনপি সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা ও আশা থাকলেও, সরকারের কঠোর অবস্থান এবং আইনি জটিলতা বিষয়টিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখেছে।
সুতরাং, রাজনীতি এখন তার ফেরা নিয়ে এক দ্বিধান্বিত অপেক্ষার মধ্যে রয়েছে—যেখানে প্রত্যাশা ও বাস্তবতা একে অপরকে খুঁজে ফিরছে।











