গাজায় যাত্রা: গ্রেটার প্রতিবাদ মিশন
ন্যায়বিচারের জন্য গ্রেটার গাজা যাত্রা Greta’s Gaza Journey for Justice


- আপডেট সময় : ১২:১৩:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫ ৮৩ বার পড়া হয়েছে
ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে গাজায় যাত্রা করেছেন গ্রেটা থুনবার্গ
বিশ্ববিখ্যাত জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবার নিজের প্রতিবাদের নতুন রূপ দেখালেন। তিনি গাজা উপত্যকার ওপর ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের অবরোধ ভাঙতে সহায়তা করার লক্ষ্যে একটি মানবিক সহায়তা বহনকারী নৌবহরের সঙ্গে যাত্রা শুরু করেছেন। এই উদ্যোগটি বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও মানবিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।


গাজা, দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত এবং দমন-পীড়নের এক করুণ নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েল ও মিসর গাজা উপত্যকাকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ফলে সেখানে খাদ্য, ওষুধ, পানি, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রবেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। ইসরায়েল দাবি করে, নিরাপত্তার স্বার্থে এ অবরোধ জরুরি, তবে আন্তর্জাতিক বহু মানবাধিকার সংস্থা এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।
এই প্রেক্ষাপটে, গ্রেটা থুনবার্গের এই পদক্ষেপ শুধু একটি মানবিক সাহায্য অভিযানের অংশ নয়, বরং এটি একটি নৈতিক প্রতিবাদ ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিচালিত এক দৃঢ় অবস্থানও বটে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তার নিরলস আন্দোলনের জন্য পরিচিত হলেও, বিভিন্ন সময় তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। গাজার শিশুদের দুর্ভোগ, পরিবেশগত সংকট এবং মানবিক বিপর্যয়ের সম্মিলিত চিত্রই তাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে জানিয়েছেন থুনবার্গ।
গ্রেটা থুনবার্গের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করা এই নৌবহরটি ইউরোপের একটি বন্দর থেকে রওনা দিয়েছে। এতে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামসহ হাজার হাজার মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা রয়েছে। অভিযানের আয়োজকরা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে গাজার উপকূলে পৌঁছাতে চান এবং আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যে থেকেই তাদের অভিযান পরিচালনা করছেন, যাতে কোনো ধরনের উস্কানি সৃষ্টি না হয়।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই মিশনকে সন্দেহের চোখে দেখছে। অতীতে গাজাগামী এমন অনেক সহায়তা বহরকে তারা বাধা দিয়েছে এবং এমনকি আন্তর্জাতিক জলসীমায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে, যার অন্যতম ছিল ২০১০ সালের ‘মাভি মারমারা’ কাণ্ড, যেখানে ৯ জন তুর্কি কর্মী নিহত হন। ফলে এবারও সংঘর্ষ বা বাধা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
তবে গ্রেটা থুনবার্গ জানিয়েছেন, তারা সহিংসতা চান না, বরং বিশ্বের সামনে গাজার সংকট তুলে ধরাই তাদের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, “মানবতা এখন একটা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে নিরীহ শিশুরা বোমার নিচে প্রাণ হারায়, সেখানে নীরব থাকা পাপ। আমরা গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা পৌঁছাতে চাই, সেটিই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।”


তার এই সাহসী উদ্যোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, আবার অনেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে এর মাধ্যমে গাজার সংকট নতুন করে বিশ্বমানচিত্রে আলোচনায় এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রেটার মতো একজন তরুণ নেতার এমন পদক্ষেপ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের প্রতি নতুন করে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আনবে। এছাড়া, জলবায়ু আন্দোলন ও মানবাধিকার আন্দোলনের সংযোগ স্থাপনের এক নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবেও এটি বিবেচিত হবে।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এই নৌবহর এখনো আন্তর্জাতিক জলসীমায় রয়েছে এবং গাজার উপকূলের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্ববাসীর নজর এখন তাদের ওপর—এই যাত্রা কি সফল হবে, না কি আগের মতই বাধা পাবে, সেটিই এখন সময়ের অপেক্ষা।












